বৃহস্পতিবার, বিকাল ৪:০৬ ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শেখ হাসিনা অনন্য কেন
/ ৫৯৫ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

[vc_row pofo_hidden_markup_1507696902_2_1=”” css=”.vc_custom_1507696989698{padding: 0px !important;}”][vc_column][vc_column_text]

২৩ জানুয়ারি (২০১৯) দেশের সব দৈনিক পত্রিকা শেখ হাসিনার অর্জন নিয়ে মুখরিত হয়ে ওঠে। কারণ আগের দিন জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ‘দ্য ফরেন পলিসি’ বিশ্বের সেরা চিন্তাবিদদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। সাময়িকীটি তাদের ১০ম বার্ষিকীর বিশেষ সংস্করণে চিন্তাবিদের নাম ও কাজের বর্ণনা প্রকাশ করেছে। সেখানে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ চিন্তাবিদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। এর পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বার, ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি টানা দ্বিতীয় ও মোট তৃতীয়বার এবং ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি। ‘দ্য ফরেন পলিসি’তে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক বিবেচনায় সতর্কতার সঙ্গে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় চিন্তাবিদদের নির্বাচন করা হয়েছে। গত ১০ বছরে বিশ্বের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১০টি বিভাগে ১০ জন করে সেরা ব্যক্তিত্ব বেছে নিয়ে তৈরি করা ১০০ জনের তালিকার অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা গণহত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন নিজ দেশে। উপরন্তু তিনি ‘প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা’ বিভাগে জায়গা করে নিয়েছেন। বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি ঢুকে পড়েছেন এই তালিকায়। ১০ জনের সংক্ষিপ্ত এই তালিকায় রাশিয়ার এক কর্মকর্তার পরই আছেন শেখ হাসিনা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সহযোগী সুরকভ আছেন অষ্টম অবস্থানে। আর শেখ হাসিনার অবস্থান নবম। উল্লেখ্য, ফরেন পলিসির করা ‘প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা’ বিভাগে সবার ওপরে আছেন ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাশেম সুলেয়মানি। তিনি দুই দশক ধরে এ ফোর্সের নেতৃত্বে আছেন। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকির জবাব দিয়ে বলেছেন, আমরা প্রস্তুত। এর পর আছেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওরসুলা ফন ডার লেয়ান, মেক্সিকোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওলগা সানজেন করডেরো, ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবিই আহমেদ, স্পেসএক্সের প্রেসিডেন্ট গুয়েনে শটওয়েল, প্যালানটিয়ারের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যালেক্স কার্প, বেলিংক্যাটের প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক ইলিয়ট হিগিংস, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সহযোগী সুরকভ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্র ও মৎস্যবিষয়ক মন্ত্রী সুশি পদজিয়াৎসু। সাময়িকীটি শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দেশটির রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও গণহত্যা চালায়। ভয়ে বিপৎসঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। রোহিঙ্গাদের দেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব নেতৃত্বের দৃষ্টি কেড়েছেন তিনি। এখন তিনি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে তৎপরতা শুরু করেছেন। নিরাপত্তার কারণে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার পক্ষগুলো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করছে। তা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার সরকার লাখো রোহিঙ্গাকে দেশে ফেরার পথ তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছে।এর আগে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসের করা বিশ্বের ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ছিলেন শেখ হাসিনা। ওই বছর নভেম্বরে করা ওই তালিকায় ৩০তম অবস্থানে ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনাকে ‘লেডি অব ঢাকা’ আখ্যায়িত করে ফোর্বসে বলা হয়েছিল, তিনি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সহায়তার অঙ্গীকার করেছেন এবং তাদের জন্য ২০০০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছেন, যা মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির অবস্থানের পরিষ্কার বিপরীত। এই সাময়িকীর ২০১৬ সালের তালিকায় তিনি ছিলেন ৩৬তম অবস্থানে। ২০১৪ সালে এশিয়ার প্রভাবশালী শীর্ষ ১০০ জনের তালিকায় ছিলেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তালিকায় তার অবস্থান ছিল ২২তম।আসলে মানবিক বিবেচনায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে এ দেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের টেলিভিশন ‘চ্যানেল ফোর’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ আখ্যায়িত করে। কেবল নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে দঁাঁড়ানো নয়, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি করে ইতিহাস রচনা করেছেন তিনি। এর জন্য ১৯৯৮ সালে ইউনেসকো তাকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। আবার ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়ন করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ২০১০ সালে নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর অনলাইন জরিপে তিনি বিশ্বের সেরা ১০ ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানের অধিকারী ছিলেন। ২০১৫ সালে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় শেখ হাসিনার অবস্থান ৫৯তম। ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি ৩০টির অধিক পুরস্কার ও পদক অর্জন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য আজ তিনি বিশ^ব্যাপী নন্দিত। সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ শেখ হাসিনাকে ১৯৯৮ সালে ‘মাদার তেরেসা’ পদক প্রদান করে। ২০০৯ সালে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা পালনের জন্য শেখ হাসিনাকে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত করে। এ ছাড়া ২০১৪ সালে ইউনেসকো কর্তৃক তিনি ‘শান্তির বৃক্ষ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে।কেবল প্রতিষ্ঠান নয়, বিশে^র বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন। ২০১৭ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দুজন শিক্ষাবিদ ড. লিজ কারমাইকেল এবং ড. অ্যান্ড্রু গোসলার বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন, তা সারাবিশ্বের জন্য এক অনুকরণীয় বার্তা। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস স্টাডিজ বিভাগের তিন অধ্যাপক যৌথভাবে শেখ হাসিনাকে বিশ্বশান্তির দূত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাদের মতে, সু চি মানবতার চরম সীমা লঙ্ঘনকারী মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চালানো পৈশাচিকতাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতি এবং নিরাপত্তার চরম ঝুঁকির মধ্যেও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেম্পটনের মতে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মানবতার প্রশ্নে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। কেবল শান্তির প্রয়োজনে বাংলাদেশ চরম অর্থনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছে। এতগুলো শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মানবিক হৃদয় লাগে। জার্মানি যা করতে পারেনি; শেখ হাসিনা তা করে দেখিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ‘পিস অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ প্রধান ড. হেনরিক উরডাল মনে করেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকেই বিশ্বশান্তির নেতার মর্যাদা দেওয়া উচিত।কেবল বিশ^শান্তি প্রচেষ্টা ও তার স্বীকৃতি নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সে জন্য জাতিসংঘের নানা সংগঠন থেকে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। কারণ তার সরকারের গত ১০ বছরের উন্নয়ন চিত্রে রয়েছে নানান বৈচিত্র্য এবং নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের সাফল্য। শিক্ষা খাতে জোট সরকারের আমলের ১৩ গুণ বেশি বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ, সৌরবিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতায়নে নারীরা এগিয়ে গেছে। অন্যদিকে জাতীয় বাজেটের আকার ও জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে। রিকশাচালক, দিনমজুর, পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মাসিক বেতন বেড়েছে, সামরিক-বেসামরিক বেতন-ভাতা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, মাথাপিছু আয়, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনৈতিক সূচকে যেমন উন্নতি হয়েছে, তেমনি সমুদ্র বিজয় ও ব্লু-ইকোনমি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরিতে এবং স্যাটেলাইট যুগে বাংলাদেশের প্রবেশের সাফল্য। আরও রয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী মজবুত করতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ। মূলত স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি খাত, যোগাযোগব্যবস্থা, আলেম-ওলামাদের কর্মসংস্থান ও মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন, শিল্প খাতে উন্নয়ন, সন্ত্রাস দমন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং পরিবেশ রক্ষায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল দেশের এসডিজির সূচকগুলো অর্জন ত্বরান্বিত হয়েছে। অর্থাৎ কেবল রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশে^র শতচিন্তাবিদের অন্যতম নন; তিনি বিশ^খ্যাত এই কারণে যে, তার দেখানো পথেই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। আশা করা যায়, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত বিশে^র তকমা এ দেশের কপালে লিখিত হবে।

[/vc_column_text][pofo_separator desktop_height=”1px” desktop_width=”100%” pofo_hidden_markup_1507723604_2_15=”” pofo_hidden_markup_1507696902_2_8=”” pofo_sep_bg_color=”#ededed” pofo_separator_height=”1px” css=”.vc_custom_1507723650128{margin-top: 8% !important;margin-bottom: 8% !important;}”][/vc_column][/vc_row]

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Total Post : 19