ড. মিল্টন বিশ্বাস
২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। শান্তিরক্ষীদের সীমাহীন আত্মত্যাগকে স্মরণ করে ২০০৩ সাল থেকে দিবসটি বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। ইউক্রেনের শান্তিরক্ষী সংস্থা এবং ইউক্রেন সরকারের যৌথ প্রস্তাবনায় ১১ ডিসেম্বর, ২০০২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গৃহীত ৫৭/১২৯ প্রস্তাব অনুযায়ী এ দিবসের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। ১৯৪৮ সালে সংঘটিত আরব-ইসরাইল যুদ্ধকালীন যুদ্ধবিরতী পর্যবেক্ষণে গঠিত জাতিসংঘ ট্রুস সুপারভিশন অর্গ্যানাইজেশন (আন্টসো) দিনকে উপজীব্য করে ২৯ মে তারিখটি স্থির করা হয়েছে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ ট্রুস সুপারভিশন অর্গ্যানাইজেশন (আন্টসো)-ই হচ্ছে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী। এই হিসেবে(১৯৪৮ সাল থেকে) জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী ৭২ বছর পূর্ণ করল। এদিনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী সকল পুরুষ-নারীকে শান্তি রক্ষার লক্ষ্যে সর্বোৎকৃষ্ট পেশাদারী মনোভাব বজায়, কর্তব্যপরায়ণতা, নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁদের আত্মত্যাগের ঘটনাকে গভীর কৃতজ্ঞতা ও যথোচিত সম্মানপূর্বক স্মরণ করা হয়। ২০০৯ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় নারীদের অবদান ও ভূমিকার উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। শান্তিরক্ষায় নারীর ভূমিকা ও লিঙ্গ-বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যেই ওই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
২.
আগেই উল্লেখ করেছি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী পূর্ণ করেছে ৭২ বছর। পক্ষান্তরে জাতিসংঘের অধীনে চলতি বছর বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনী ৩২ বছর পূর্ণ করল(১৯৮৮-২০২০)। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে যুদ্ধরত সিরিয়াতে একটি মেডিকেল টিম পাঠিয়ে শান্তি রক্ষায় মুসলিম দেশগুলোর সাথে তাঁর সরকারের বন্ধুত্ব স্থাপনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দেয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা প্রশংসিত হয়েছেন দেশ-বিদেশে। যেমন, এর আগে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, মানবাধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সেনাদের ভূমিকা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মহিলা পুলিশ দল সোচ্চার রয়েছেন সামাজিক-সম্প্রীতি সুসংহত করতে। আমি কোনো মিশনে গেলেই উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের সেনাদের কথা বলি।’ জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা অর্জন আমাদের জন্য সত্যিকার অর্থেই গৌরবের। এ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সেসময় বলেছিলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্রবাহিনীর অংশগ্রহণের ব্যাপক সুযোগ করে দেয়া আওয়ামী লীগ সরকারের অঙ্গীকার। তাঁর মতে, ‘বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক শান্তি আর সমৃদ্ধি ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। সে দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে সবাই বিশ্বশান্তি বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর। সে আলোকেই বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন।’ প্রকৃতপক্ষে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে বিভিন্ন দেশের জাতিগত সংঘাত মোকাবেলা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বিচিত্র দেশের রাস্তাঘাট, অবকাঠামো নির্মাণ ও চিকিৎসা সেবায় আমাদের শান্তিরক্ষীরা অনুকরণীয় দায়িত্ব পালন করায় বিশ্বব্যাপী প্রসংশিত হচ্ছেন।
অর্থাৎ বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর বড় অংশ এবং পুলিশ ও অন্যান্য সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন। ‘দেশের প্রতিরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ আর জনগণের জন্য ভালোবাসা’- এই দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর দেশপ্রেম। এখন বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী একটি পরিচিত ও আস্থার প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দুর্যোগময় পরিবেশে শান্তি স্থাপন করে অপরিচিত দেশের অচেনা মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। শান্তি রক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী বেশ কিছু সেনা কর্মকর্তা তাঁদের অভিজ্ঞতা নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। যেমন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বায়েজিদ সরোয়ার লিখেছেন ‘কম্বোডিয়া’, ‘কুর্দিস্থানের দিনগুলি’ লিখেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামস। আরো অনেকের গ্রন্থ রয়েছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ নিয়ে। ফলে শান্তি মিশনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এদেশে ‘সামরিক সাহিত্যে’র একটি ভিন্ন ধারা সৃষ্টি হয়েছে।
৩.
জাতিসংঘ সনদের ষষ্ঠ অধ্যায়ে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা এবং সপ্তম অধ্যায়ে শান্তি প্রয়োগের বিধান রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সংঘর্ষে লিপ্ত দুপক্ষের সম্মতি এবং মতৈক্যের উপর ভিত্তি করে শুরু হয়। শান্তিরক্ষা বাহিনীকে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ কর্তৃক অনুমোদিত একটি শান্তি চুক্তি বা শান্তি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মোতায়েন করা হয়। এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ৬৮টি মিশনের মধ্যে ৫৪টিতে দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী সদস্য অংশগ্রহণ করেছেন। বর্তমানে বিশ্বের ৮টি দেশের শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের ৫৮৭৮ জন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাদের মধ্যে সেনা ৫০৭০ জন, নৌ ৩৪৫ জন এবং বিমানবাহিনীর ৪৬৩ জন সদস্য আছেন। ওইসব দেশের ৯টি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত আছেন। ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান শান্তি মিশনে যোগদানের মধ্য দিয়ে এদেশের সেনাবাহিনীর ১৫ জন সদস্য জাতিসংঘের পতাকাতলে একত্রিত হন। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী শান্তি মিশনে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে। বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ পরিবারের সদস্য হয় নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা মিশন এলাকায় বিবাদমান দলকে নিরস্ত্রীকরণ, মাইন অপসারণ, সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা প্রদান, সড়ক ও জনপথ এবং স্থাপনা তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। কঙ্গো, মালি, সুদান, সাউথ সুদান, সাহারা, লেবানন, হাইতি, পূর্ব তিমুর প্রভৃতি স্থানে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল নাম। তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গত ৩২ বছরে এদেশের ১২৯ জন প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। অর্থাৎ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে ১২১ জন সেনা, ৪ জন নৌ ও ৪ জন বিমান বাহিনীর সদস্য অর্থাৎ শতাধিক সদস্য শহীদ হয়েছেন; পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন ১৪জনের বেশি। অন্যদিকে শান্তিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে বর্তমানে রেমিটেন্স আয় হচ্ছে ২ হাজার কোটি টাকা। স্মরণীয়, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে যে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে তার কারণে হচ্ছে শান্তি মিশন থেকে আয়। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতিসংঘের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কারণ বিশ্বে সকল প্রান্তের দুর্গত, নিপীড়িত ও নিরীহ মানুষের সেবায় এ শান্তিরক্ষীদের হাত সর্বদা প্রসারিত। আগেই উল্লেখ করেছি, সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়েও তারা আর্তমানবতার সেবা করে চলেছেন।
শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হচ্ছে-‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কার সাথে বৈরিতা নয়।’ বিশ্বের বিরোধপূর্ণ স্থানে জাতিসংঘের ডাকে শান্তি স্থাপন করা- এজন্য আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জরুরি দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হচ্ছে। জাতিসংঘকে শান্তি স্থাপনে সহায়তা দেয়া এবং পাশাপাশি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের সুশিক্ষিত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী থাকাটা অন্যতম শর্ত।
বর্তমান শতাব্দীতে তৃতীয় প্রজন্মের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বহুমাত্রিক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এজন্য আজকের পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিন বাহিনীর ধ্যান ধারণা, চিন্তা-চেতনার আধুনিকায়ন করে যেতে হচ্ছে। কারণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিচিত্ররকম আবহাওয়ায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করছেন। হাইতি থেকে পূর্ব তিমুর, লেবানন থেকে কঙ্গো পর্যন্ত বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ এলাকায় তাদের পদচারণা। কোনো একটি দেশে হয়ত তীব্র শীত, সাহারা মরুভূমির দুঃসহনীয় গরম ও পূর্ব এশিয়ার ক্লান্তিকর আর্দ্রতার সাথে মানিয়ে নিয়ে রাত-দিনের দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার পরিচয় দিয়ে চলেছেন আমাদের সশস্ত্র বাহিনী।
বিশ্বমানবতা প্রতিষ্ঠায় আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনীর রয়েছে অসামান্য অবদান। কারণ ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠী রয়েছে; রয়েছে বিচিত্র রাজনৈতিক মতাদর্শ। এসব সামাজিক ভেদাভেদ ও অর্থনৈতিক বৈষম্যকে পিছনে ফেলে সকলকে নিয়ে সহাবস্থান নিশ্চিত করছেন শান্তিরক্ষীরা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রায় দুশত আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার, অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যানবাহন নিয়ে তাদের অপারেশন পরিচালনা করছেন। বাংলাদেশ নৌ বাহিনী দুটি যুদ্ধ জাহাজ ওসমান ও মধুমতি লেবানন এবং ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় সর্বদা টহলের কাজে মোতায়েন রয়েছে। মিশন এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভ্যন্তরীণ নদীপথগুলোতেও তাদের সতর্ক প্রহরা দেখা যায়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বিআর-১৩০ এয়ারক্রাফট, এমআই-১৭ ও বেল হেলিকপ্টারের মাধ্যমে কঙ্গো এবং অন্যত্র জরুরি সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন, উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ তৎপরতায় দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ পুলিশের অনেক সদস্য মিশন এলাকার স্থানীয় প্রশাসনকে দাঙ্গা দমনে সহায়তা দিচ্ছেন। উল্লেখ্য, সাড়ে ছয়শতের বেশি পুলিশ সদস্য মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন।বিশ্বের বিশৃঙ্খল এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করে শান্তি স্থাপনে সাফল্য অর্জন করাও বাংলাদেশ মিশনের শান্তি প্রকল্পের অন্যতম কাজ। শান্তিরক্ষী হিসেবে বাংলাদেশী নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসে একটি মাইলফলক। বর্তমানে মোট ৪৭৭ জন নারী নিয়োজিত আছেন- তার মধ্যে সেনা সদস্য ৩৬২, নৌ ১৮ এবং বিমান সদস্য ৯৭ জন। জাতিসংঘের মহাসচিবসহ শান্তি রক্ষা মিশনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এদেশের নারী শান্তিরক্ষীদের অবদানের ব্যাপক প্রশংসা করে গেছেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ বিরোধী সংস্থাগুলো বর্তমান সরকারের প্রতি সেনাবাহিনীর আনুগত্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে। বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে; শান্তিরক্ষী প্রেরণে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। অথচ এদেশের বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে বৈরি সম্পর্ক অনুপস্থিত। বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের সংগঠনের উস্কানি কোনো কাজে লাগছে না। কারণ প্রতিটি বাহিনীর রয়েছে পেশাদারী আচরণ। তাছাড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মান্য করার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। তবু বিভিন্ন অপপ্রচার থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষার জন্য, রাষ্ট্রের অনিবার্য অঙ্গ সেনাবাহিনীকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে অপপ্রচার মোকাবেলায় মিডিয়ার কার্যকর অবদান রাখা জরুরি। বলা যায়, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা মিশনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার সফল হয়নি। এদেশের সকলেই জানেন, গত ৩২ বছর অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশন। ভয়-ভীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশি সদস্যরা শান্তির বার্তা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। দৃঢ়তার সঙ্গে তারা দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
৪.
মূলত তিন দশকের বেশি সময় ধরে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ উৎসাহব্যঞ্জক। শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা মোতায়েনের সংখ্যার বিচারেও অনেক দিন ধরে শীর্ষ স্থান দখল করে আছে আমাদের দেশ। এই ধারা অব্যাহত রাখা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমুন্নতি বিধানের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর বিশ্ব শান্তি স্থাপনের ভূমিকাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করা দরকার। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ও শান্তি রক্ষা মিশনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফরে এসে সেই কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বারবার। শান্তি মিশনের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ শান্তিরক্ষীরাই বাংলাদেশের সক্ষমতাকে বিশ্ববাসীর কাছে গৌরবের সঙ্গে তুলে ধরছেন। আমাদের ৩২তম বর্ষপূর্তিতে শান্তিরক্ষীদের অশেষ অবদানকে বিনম্র চিত্তে স্মরণ করছি।
(লেখক : ড. মিল্টন বিশ্বাস, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, email-writermiltonbiswas@gmail.com)