শুক্রবার, সকাল ৮:৫৬ ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করোনা কর্মপঞ্জি
/ ৬২৪ বার
আপডেট : শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

ড. মিল্টন বিশ্বাস।।

করোনা-ভাইরাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৈনন্দিন কর্মপঞ্জি গত তিন মাসে বিশাল এক রাষ্ট্রীয়-কর্মযজ্ঞে পরিণত হয়েছে।অবশ্য সংক্রমণ রোধের প্রস্তুতি ছিল তার আগে থেকেই। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চীনের উহান প্রদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে অনুষ্ঠিত একটি সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন।তিনি ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে চীন থেকে আটকেপড়া বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। মার্চের ৮ তারিখে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে জরুরি নয় এমন ব্যবসা-বাণিজ্য অনলাইনে পরিচালনার নির্দেশ দেন।এর আগে জানুয়ারির প্রথম থেকেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং ডিভাইস বসান, যাতে কেউ করোনাভাইরাসের উপসর্গ বহন করছে কিনা তা বোঝা যায়। প্রায় সাড়ে আট লাখ মানুষের স্ক্রিনিং হয়, যাদের প্রায় ১ লাখ ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।

মূলত গত তিন মাস ধরে করোনাভাইরাসের মহামারি ঠেকাতে লড়ছে বাংলাদেশ। ছোঁয়াচে এই রোগের বিস্তার রোধের জন্য ৩০ মে পর্যন্ত ছিল সাধারণ ছুটি। তবে এখনও সবাইকে বলা হয়েছে ঘরে থাকতে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের সূচনা দিন অর্থাৎ ১৭ মার্চ থেকে সর্বস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ঘোষিত হবার পর, ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। অর্থাৎ রোগী শনাক্তের ২ সপ্তাহ পরই হার্ডলাইনে চলে যায় সরকার। গত ৩ মাসে দেশের আট বিভাগের জেলা প্রশাসক, চিকিৎসক, পুলিশ, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে ব্রিফিং ও নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সংকট মোকাবিলার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মতামতও নিয়েছেন; লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলো যেন খাবার সংকটে না পড়ে সেজন্য তাদের পাশে দাঁড়াতে দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও নেতা-কর্মীদের নির্দেশও দিয়েছেন।করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী।উল্লেখ্য, তিনি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে কয়েক দফায় পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রাম ও সিলেট(৭ এপ্রিল), খুলনা ও বরিশাল(১২ এপ্রিল), ঢাকা(১৬ এপ্রিল), ঢাকা ও ময়মনসিংহ(২০ এপ্রিল), রাজশাহী(২৭ এপ্রিল) এবং রংপুর বিভাগের(৪ মে) জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাইরের মানুষের সঙ্গে না মেশা, বেশি লোকসমাগম না হওয়া, মানুষ থেকে দূরে থাকা দরকার।যা নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার জন্যও প্রয়োজন।তাঁর মতে, ‘বাইরের লোকের সঙ্গে যত কম মেশা যায়, কম যোগাযোগ রাখা যায়, সেটা সব থেকে ভাল। সেটাই সুরক্ষিত করবে। কারণ এটি হচ্ছে অত্যন্ত সংক্রামক একটা ব্যাধি। এত সংক্রামক, এটা কার যে কখন হবে তা বোঝাও যায় না। এটিই হচ্ছে সব থেকে দুশ্চিন্তার বিষয়।’ কেবল পরামর্শ ও নির্দেশনা নয় বাস্তবায়নযোগ্য অনেককিছু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।মহামারির কারণে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সরবরাহ ও চাহিদা দ্বিমুখী সংকটের সম্মুখীন। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন খাতে যে বৃহৎ অঙ্কের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে যার মূল সুবিধা ভোগ করবে উৎপাদন ও সেবা খাত, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষামূলক খাতসমূহ। সংকট প্রলম্বিত হলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কৃষি উৎপাদন বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী এ সময় শুধু কৃষি খাতে প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার প্রণোদনা দিয়েছেন।অর্থাৎ কৃষিখাত সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে মহামারি পরিস্থিতিতে।কেবল দেশ ও জাতি নিয়ে ব্যস্ত নন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিশ্বের নেতৃবৃন্দের কথাও ভেবেছেন করোনা মোকাবেলার মুহূর্তে।

তিনি চীনে করোনাভাইরাসে প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করে ১৩ ফেব্রুয়ারি চীনের প্রেসিডেন্টকে একটি পত্র পাঠান এবং এই সংকট কাটিয়ে উঠতে যে কোনো ধরনের সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের আগ্রহ প্রকাশ করেন।প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় চীনের পাশে থাকায় দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন একইমাসে।

মার্চ মাসে এক পত্রে যুক্তরাজ্যের যুবরাজ চার্লস করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে এই রোগ মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করার বাংলাদেশের অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শেখ হাসিনা যুবরাজ চার্লসের পূর্ণ আরোগ্য এবং যুক্তরাজ্যের জনগণের অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।উপরন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন তিনি।২৮ মার্চ এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সুস্থতা কামনা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’ এভাবেই দেশ থেকে বহির্বিশ্বে শেখ হাসিনার করোনাভাইরাস মোকাবেলার ভাবনা প্রসারিত হয়েছে।

করোনা মোকাবেলায় শেখ হাসিনার মাসওয়ারি কর্মপঞ্জি নিম্নরূপ।

 ‘মার্চ’ মাস :

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২৪ ঘণ্টা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা ও সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের সূচনা হয় মার্চ মাস থেকেই; সমন্বয় করা হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের(আইইডিসিআর)সঙ্গে। অর্থাৎ করোনা মোকাবেলায় ২০২০ সালের মার্চ থেকেই শেখ হাসিনা কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন।

মার্চ : করোনা ভাইরাস বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লে এই তারিখে সন্ধ্যায় গণভবনে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন করোনা ভাইরাস নিয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।

মার্চ : প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী।

 ১৫ মার্চ : সন্ধ্যায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সার্কভুক্ত দেশগুলোকে এক হওয়ার প্রস্তাব দেন নরেন্দ্র মোদি। তাঁর এই প্রস্তাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সার্কভুক্ত অধিকাংশ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান সমর্থন জানান।

১৬ মার্চ : নিজ কার্যালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা করোনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।

 ১৭ মার্চ : করোনার কারণে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী বড় পরিসরে পালন না করে স্বল্পপরিসরে অনুষ্ঠিত হয়।সকালে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং পরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।বিকেলে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন।এইদিন তিনি সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।

১৯ মার্চ : প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে একনেক সভায় অংশ নেন।

২৩ মার্চ : দশ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। ১. ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি রয়েছে। এরপর ২৭ ও ২৮ মার্চ সরকারি সাপ্তাহিক ছুটি আছে। ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত পরবর্তী পাঁচ দিন পর্যন্ত সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এছাড়া ৩ ও ৪ এপ্রিলের সাপ্তাহিক ছুটি সাধারণ ছুটির সঙ্গে যোগ হবে।অর্থাৎ ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান ছুটির আওতায় থাকবে।তবে কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতালসহ জরুরি যেসব সেবা রয়েছে তার জন্য এসব প্রযোজ্য হবে না।করোনাভাইরাস বিস্তৃতির জন্য সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে জনসাধারণকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ ক্রয় ও চিকিৎসা গ্রহণ ইত্যাদি) কোনোভাবেই ঘরের বাইরে না আসার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।২. এ সময়ে যদি কোনো অফিস-আদালতে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করতে হয় তাহলে তাদের অনলাইনে সম্পাদন করতে হবে।সরকারি অফিস-সময়ের মধ্যে যারা প্রয়োজন মনে করবে তারাই শুধু অফিস খোলা রাখবে।৩. গণপরিবহন চলাচল সীমিত থাকবে।জনসাধারণকে যথাসম্ভব গণপরিবহন পরিহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।যারা জরুরি প্রয়োজনে গণপরিবহন ব্যবহার করবে তাদের অবশ্যই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেই গণপরিবহন ব্যবহার করতে হবে।গাড়ি চালক ও সহকারীদের অবশ্যই গ্লাভস এবং মাস্ক পড়াসহ পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।৪. জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় ছুটিকালীন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। ৫. ২৪ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে সশস্ত্র বাহিনী জেলা প্রশাসনকে সহায়তায় নিয়োজিত থাকবে।দেশের ৬৪ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাদের স্ব স্ব জেলার প্রয়োজন অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীর জেলা কমান্ডারকে রিকুইজিশন দেবে।৬. করোনাভাইরাসের কারণে কোনো ব্যক্তি যদি স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম হয় তাহলে সরকারের যে ঘরে ফেরার কর্মসূচি রয়েছে, সে কর্মসূচির মাধ্যমে তারা নিজ নিজ গ্রামে ফিরে গিয়ে আয় বৃদ্ধির সুযোগ পাবে।এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকরা প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।৭. ভাসানচরে এক লাখ লোকের আবাসন ও জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার।এ সময় যদি দরিদ্র কোন ব্যক্তি ভাসানচরে যেতে চান তাহলে তারা যেতে পারবেন।এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকরা প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবেন। ৮. করোনাভাইরাসজনিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় অন্নসংস্থানের অসুবিধা নিরসনের জন্য জেলা প্রশাসকদের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে এ সহায়তা প্রদান করা হবে।৯. প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৫০০ জন চিকিৎসকের তালিকা তৈরি ও তাদের প্রস্তুত রাখবে।১০. সব ধরনের সামাজিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাগম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।বিশেষ করে অসুস্থ জ্বর সর্দি কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মসজিদে না যাওয়ার জন্য বারবার নিষেধ করা হয়।

২৫ মার্চ : দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।এ অবস্থায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। এ সময় দেশের পোশাক খাতসহ রফতানি শিল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন তিনি। ২৫ মার্চ থেকে সেনাবাহিনী মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে।

২৬ মার্চ : স্বাধীনতা দিবসে জনসমাগম এড়িয়ে সবাইকে বাড়িতে থাকতে বলা হয়।

২৯ মার্চ : জনগণের উদ্দেশ্যে পরামর্শ ও আহ্বান সংবলিত চারটি বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। বার্তায় তিনি করোনা মোকাবিলায় নাগরিকদের করণীয়, রোগটির প্রতিরোধে সরকারের কাছে সুরক্ষা ও চিকিৎসা সামগ্রীর ঘাটতি না থাকা, করোনায় জনগণকে অযথা ভীত না হওয়া এবং বৈশ্বিক এ দুর্যোগকালে সবাইকে সহনশীল ও সংবেদনশীল হওয়ার কথা তুলে ধরেন। পুনরায় কর্মহীনদের তালিকা করে ত্রাণ বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। যেসব কর্মজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে খাদ্য সমস্যায় আছে প্রধানমন্ত্রী সেসব কর্মহীন লোক (যেমনÑ ভিক্ষুক, ভবঘুরে, দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার) যারা দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে সংসার চালায় তাদের তালিকা প্রস্তুত করে খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।

৩০ মার্চ : সড়ক, নৌ, আকাশ পথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রেখে সবাইকে বাড়িতে থাকতে বলা হয়।

৩১ মার্চ : এদিন সকালে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভাগীয় কমিশনার, ৬৪ জেলা প্রশাসক, সিটি মেয়রের সঙ্গে কথা বলেন।দীর্ঘ ৩ ঘণ্টার এই ভিডিও কনফারেন্সে গণভবন থেকে তিনি জেলা প্রশাসকদের কাছে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বর্তমান ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে সার্বিকভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।নভেল করোনাভাইরাসের মহামারি সামলাতে মাঠ প্রশাসন কীভাবে কাজ করছে তা জানার পাশাপাশি তাদের দিক-নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।

‘এপ্রিল’ মাস :

এপ্রিল মাসকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাস বিস্তারের জন্য ‘খারাপ সময়’ হিসেবে উল্লেখ করে এসময় দলীয় নেতা-কর্মী এবং সরকারের সকল স্তরে যেমন যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন, তেমনি দেশের কোথায় কী করতে হবে, কী ঘটছেÑ যাবতীয় বিষয়ে সার্বিক দিকনির্দেশনা দেন।২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেনÑ ‘আমরা এই দুঃসময় কাটিয়ে উঠব। দুর্যোগ আসবে সেটি আবার চলে যাবে। আবার আলো আসবে।’ কেবল আশার কথাই শোনাননি, রীতিমত কর্মব্যস্ত সময় পার করেছেন তিনি।

৩ এপ্রিল : মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে এই তারিখে প্রকাশিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩১ দফা নির্দেশনা হলোÑ ১. করোনাভাইরাস সম্পর্কে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। ২. লুকোচুরির দরকার নেই, করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। ৩. পিপিই সাধারণভাবে সকলের পরার দরকার নেই। চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সবার জন্য পিপিই নিশ্চিত করতে হবে। এই রোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত পিপিই, মাস্কসহ সব চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত রাখা এবং বর্জ্য অপসারণের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ৪. কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় নিয়োজিত সব চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, এ্যাম্বুলেন্স চালকসহ সংশ্লিষ্ট সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।৫. যারা হোম কোয়ারেন্টিনে বা আইসোলেশনে আছেন, তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে হবে।৬. নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।৭. নদীবেষ্টিত জেলাসমূহ নৌ-এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে।৮. অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে হবে।৯. পরিচ্ছন্নতা নিশ্চত করা।সারাদেশের সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।১০. আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। জাতীয় এ দুর্যোগে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সব সরকারি কর্মকর্তা যথাযথ ও সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেনÑ এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।১১. ত্রাণ কাজে কোন ধরনের দুর্নীতি সহ্য করা হবে না।১২. দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক যেন অভুক্ত না থাকে।তাদের সাহায্য করতে হবে।খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অতিরিক্ত তালিকা তৈরি করতে হবে।১৩. সোশ্যাল সেফটিনেট কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।১৪. অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন স্থবির না হয়, সে বিষয়ে যথাযথ নজর দিতে হবে।১৫. খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে, অধিক প্রকার ফসল উৎপাদন করতে হবে।খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার করতে হবে।কোন জমি যেন পতিত না থাকে।১৬. সরবরাহ ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে।যাতে বাজার চালু থাকে।১৭. সাধারণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ১৮. জনস্বার্থে বাংলা নববর্ষের সব অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে যাতে জনসমাগম না হয়।ঘরে বসে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নববর্ষ উদযাপন করতে হবে।১৯. স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সমাজের সব স্তরের জনগণকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।প্রশাসন সবাইকে নিয়ে কাজ করবে।২০. সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।২১. জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন ওয়ার্ডভিত্তিক তালিকা প্রণয়ন করে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করবেন।২২. সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমন: কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিক্সা/ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, পথশিশু, স্বামী পরিত্যক্তা/বিধবা নারী এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ নজর রাখাসহ ত্রাণ সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।২৩. প্রবীণ নাগরিক ও শিশুদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।২৪. দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি (এসওডি) যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সব সরকারি কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।২৫. নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন, সরবরাহ ও নিয়মিত বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া মনিটরিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।২৬. আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করবেন না।খাদ্যশস্যসহ প্রয়োজনীয় সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।২৭. কৃষকগণ নিয়মিত চাষাবাদ চালিয়ে যাবেন।এক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে।২৮. সব শিল্প মালিক, ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি পর্যায়ে নিজ নিজ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়ি-ঘর পরিষ্কার রাখবেন।২৯. শিল্প মালিকগণ শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে উৎপাদন অব্যাহত রাখবেন।৩০. গণমাধ্যম কর্মীরা জনসচেতনতা সৃষ্টিতে যথাযথ ভূমিকা পালন করে চলেছেন।এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের গুজব ও অসত্য তথ্য যাতে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।৩১. গুজব রটানো বন্ধ করতে হবে।ডিজিটাল প্লাটফর্মে নানা গুজব রটানো হচ্ছে।গুজবে কান দিবেন না এবং গুজবে বিচলিত হবেন না।

এপ্রিল : গণভবনে  প্রেস কনফারেন্স করেন প্রধানমন্ত্রী।করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণে নতুন করে ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।নতুন চারটিসহ পাঁচটি প্যাকেজে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। প্রেস কনফারেন্সের পর তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবনে ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে’ অনুদান গ্রহণ করেন।

এপ্রিল : গণভবনে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এপ্রিল : চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন।

১২ এপ্রিল : করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর সঙ্গে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্স করেন তিনি।

১৩ এপ্রিল : বাংলা নববর্ষ ১৪২৭ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। সকালে পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শকের (আইজি) ব্যাজ পরিধান অনুষ্ঠানে অংশ নেন। একই দিন তিনি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে’ অনুদান গ্রহণ করেন।

১৫ এপ্রিল : সারাদেশে ‘ত্রাণ কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। সন্ধ্যায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ধানমন্ডিতে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের এ বিষয়ে ৩টি নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী এসময় গরিব, অসহায়, দুস্থ মানুষদের পাশে বিত্তবানদের দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।নির্দেশনাগুলো হলো- ১. সারাদেশে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে ত্রাণ কমিটি গঠন করতে হবে। সব সাংগঠনিক উপজেলা শাখার নেতাদের দ্রুতই ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ত্রাণ কমিটি প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক জেলা শাখায় জমা দিতে হবে।এই ত্রাণ কমিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে দল-মত নির্বিশেষে প্রকৃত দরিদ্র, দুস্থ ও অসহায় মানুষের তালিকা প্রস্তুত করবে এবং ওই তালিকা স্থানীয় প্রশাসনকে প্রদান করে সঠিক তালিকা প্রণয়নে সহায়তা ও সমন্বয় করবে।একইসাথে এই কমিটি মানুষের মানবিক সংকটে সার্বিক সহযোগিতা এবং ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবে।স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করবে।২. বর্তমানে ৫০ লাখ হতদরিদ্র, দুস্থ, অসহায় ও কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষকে সরকারিভাবে রেশন কার্ডের আওতাভুক্ত করা হয়েছে এবং করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় আরও ৫০ লাখ মানুষকে রেশন কার্ডের অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি দল-মত নির্বিশেষে সমাজের হতদরিদ্র, দুস্থ, অসহায় ও কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষ যাতে অন্তর্ভুক্ত হয় সে ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান করবে। ৩. আওয়ামী লীগের এই ত্রাণ কমিটি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যথাযথ সরকারি নির্দেশনা পালন, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনগণকে সচেতন করবে এবং মানবিক সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়াবে। পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।

১৬ এপ্রিল : ঢাকা বিভাগের ৯ জেলা- ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জেলার আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।

১৮ এপ্রিল :  জাতীয় সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯ এপ্রিল : দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে শেখ হাসিনা সরকার ১৯ এপ্রিল ১৭ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেন। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এবং ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি এবং জ্যেষ্ঠ শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মাদ সহিদুল্লাহকে কমিটির সভাপতি এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরাকে মহাসচিব করা হয়।

২০ এপ্রিল : সকালে ভিডিও কনফারেন্স করেন ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর করোনা মোকাবেলায় নিয়োজিত প্রশাসনিক ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে।

২২ এপ্রিল : আমেরিকার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘ফোর্বসে’ এই দিন প্রকাশিত কানাডিয়ান লেখক অভিভাহ ভিটেনবারগ-কক্স রচিত Ô8 (More) Women Leaders Facing The Coronavirus CrisisÕ শীর্ষক কলামে করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবেলায় সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার প্রশংসা করা হয়।নারী নেতৃত্বাধীন সিঙ্গাপুর, হংকং, জর্জিয়া, নামিবিয়া, নেপাল, বলিভিয়া, ইথিওপিয়া এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়কদের ওপর আলোকপাত করার সময় বলা হয়, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন ১৬ কোটি ১০ লাখের মতো মানুষের দেশ বাংলাদেশের মহামারির সংকট মোকাবেলায় দ্রুত সাড়া দিয়েছেন, যাকে ‘প্রশংসনীয়’ বলেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। কলামে বলা হয়েছে, এদেশের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তিনি গত ফেব্রুয়ারি থেকে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন সেগুলো এক অর্থে যুক্তরাজ্যও করতে পারেনি।

২৩ এপ্রিল : দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার বিষয়ক এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন-‘এক সঙ্গে লড়তে হবে’।‘এনহ্যান্সিং রিজিওন্যাল কো-অপারেশন ইন সাউথ এশিয়া টু কমব্যাট কোভিড-১৯ রিলেটেড ইমপ্যাক্ট অন ইটস ইকোনমিকস’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)।প্রধানমন্ত্রী পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করে বিশ্বের সকল নেতা, সংস্থা ও ফোরামের ঐক্যের মাধ্যমে একসঙ্গে করোনা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। ওই তারিখের ভার্চুয়াল সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, বিশ্ব সম্ভবত গত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি। সুতরাং সবাই একসঙ্গে সংকটের মোকাবেলা করা দরকার। সমাজের প্রতিটি পর্যায় থেকে সমন্বিত দায়িত্বশীলতা এবং অংশীদারিত্বমূলক মনোভাব প্রয়োজন।তাঁর উত্থাপিত ৫ দফা প্রস্তাব হলোÑ‘ক) বিশ্বকে মানবকল্যাণ, বৈষম্যদূরীকরণ, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা এবং মহামারির পূর্বের অর্থনৈতিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নতুন ভাবনা জরুরি। খ) প্রয়োজন জি-৭, জি-২০ এবং ওইসিডির মতো সংগঠনগুলো থেকে দৃঢ় ও পরিকল্পিত বৈশ্বিক নেতৃত্ব। জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাকেও এগিয়ে আসা উচিত। গ) কোভিড পরবর্তী সময়ে নতুন নীতি, স্ট্যান্ডার্ড ও পদ্ধতির প্রবর্তন হলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডকে যথাযথ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে যেন বাংলাদেশের মতো দেশগুলো টিকে থাকতে পারে। ঘ) অভিবাসী কর্মীদের বেকারত্ব মোচনের জন্য একটি অর্থপূর্ণ বৈশ্বিক কৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ঘ) এই মহামারিতে কার্যকরীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংক্রমণ চিহ্নিত করা গেছে। ভবিষ্যতের প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন সেক্টরে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে এই রকম উদ্ভাবনীমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।’

২৫ এপ্রিল : মহামারি বিপর্যয় রোধে বৈশ্বিক সমন্বয় চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মহাপরিচালক ডা. টেড্রোস আধানম গ্রেব্রিয়েসিসকে লেখা এক চিঠিতে তিনি করোনাভাইরাস মহামারির মতো ভবিষ্যতে যেকোনো বিশ্ববিপর্যয় কার্যকরভাবে মোকাবেলায় ‘আরো বেশি নীতি ও আর্থিক গুরুত্ব প্রদানের’ জন্য ‘বৈশ্বিক সমন্বয়ে’র আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি লিখেছেন, ‘আমি ভবিষ্যতে যেকোনো বিশ্ববিপর্যয় কার্যকরভাবে মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের মতো স্বাস্থ্য বিষয়গুলোতে আরো নীতি ও আর্থিক গুরুত্ব প্রদানে বিশ্বব্যাপী সমন্বয়ের আহ্বান হিসেবে সবাইকে এই সংকটটিকে সতর্কতা হিসেবে বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালের ২৩ মার্চে তাঁর লেখা বিশদ চিঠির জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানান; যা কোভিড-১৯-এর মতো মারাত্মক মহামারির বিশ্বঝুঁকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকর এবং সম্ভাব্য পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে তাদের তাৎক্ষণিকভাবে সক্রিয় কর্মকাণ্ডের জন্য ধন্যবাদ জানাতে এবং এই বিষয়ে ডাব্লিউএইচও কর্তৃক গৃহীত ভূমিকা ও পদক্ষেপের প্রতি আমাদের দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করার সুযোগ হিসেবে আমি এটিকে গ্রহণ করতে চাই।’

প্রাণঘাতী ভাইরাস প্রতিরোধে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব প্রচেষ্টা এখন করোনা পরীক্ষা, আইসোলেশনে এবং কোয়ারেন্টিনে রাখার ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, চীনে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরপরই সরকার এ ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে এবং জাতীয় জরুরি পরিকল্পনা হিসেবে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত একটি জাতীয় প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদান পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। তিনি বলেন, একটি জাতীয় কমিটি ও অন্য একটি টেকনিক্যাল কমিটির অধীনে ডাব্লিউএইচওর নির্দেশিকা অনুসারে পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিনিয়ত আপডেট করা হচ্ছে।তিনি বলেন, জাতীয় কমিটি ছাড়াও আমরা আঞ্চলিক, জেলা, উপজেলা এবং নিচের স্তরগুলোতে কমিটি গঠন করেছি, যাতে জনগণের প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য পেশাজীবী, প্রশাসন এবং অন্য ব্যক্তিরা সংশি¬ষ্টদের নিরন্তর নির্দেশনা প্রদান করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে; যার মধ্যে রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা, সব সরকারি ও বেসরকারি অফিস, বাজার (খুব প্রয়োজনীয় বিষয় ছাড়া) ৪১ দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া এবং এমনকি পবিত্র রমজান মাসেও সব ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী এবং বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা এসব পদক্ষেপের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবং সর্বশেষ ব্যক্তির কাছে পৌঁছানোর জন্য বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানের জন্য ২৪ ঘণ্টা কাজ করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ডাব্লিউএইচওর কড়া নির্দেশনা অনুযায়ী সরকার ব্যাপক পরীক্ষা ও আইসোলেশন বজায় রাখার ওপর জোর দিচ্ছে এবং সারা দেশে করোনা পরীক্ষার সুযোগ সম্প্রসারিত ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পরীক্ষার কিট সংগ্রহ করেছে।তিনি বলেন, ‘যদিও বিপুল জনসংখ্যা ও জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবু আমরা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।’

২৭ এপ্রিল : করোনা পরিস্থিতি ও ত্রাণ বিতরণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে মতবিনিময় করেন রাজশাহী বিভাগের বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, রাজশাহী এবং সিরাজগঞ্জ জেলার প্রতিনিধিদের সঙ্গে।ভিডিও কনফারেন্সে তিনি উল্লিখিত জেলার প্রশাসক, পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, নার্স, রাজনীতিক, সেনাসদস্য, মসজিদের ইমাম, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে কথা বলেন।তিনি বলেন, আমরা এই দুঃসময় কাটিয়ে উঠব।আবার কলকারখানা খুলবে।আমাদের অর্থনীতি আবার সচল হবে।শেখ হাসিনা আরও বলেন, করোনা মহামারি পরিস্থিতি থাকলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনই স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হবে না।সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে।যখন করোনা সংক্রমণ থামবে, তখন খুলব।তিনি বলেন, আলেমরা মসজিদে সীমিত আকারে জামাত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।সবাই বাসায় বসে ইবাদত করুন।এই মহামারি যাতে কেটে যায় দোয়া করুন।শেখ হাসিনা বলেন, যারা করোনা রোগীদের দেখাশোনা করছেন তাদের প্রণোদনা দিয়েছি। যদি কেউ অসুস্থ হন তাদের বিনা পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।তাছাড়া আমরা পাঁচ লাখ থেকে ৫৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়তা দেব।করোনা মোকাবেলায় আরও ২ হাজার চিকিৎসক ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ করা হবে বলে তিনি জানান।

২৯ এপ্রিল : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে ফোন করেন।ফোনালাপে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ-ভারত একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে সম্ভাব্য খাদ্যসংকট মোকাবেলায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে ঢাকা এবং দিল্লি একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।ওই দিন অপরাহ্ণে শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেন সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন লোফভেনও।

‘মে’ মাস :

রোজা ও ঈদ-উল-ফিতরের মধ্যে যখন করোনায় মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ছোবলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।করোনা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় মে মাস জুড়ে প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন।এ মাসে ব্রিটিশ ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, করোনাভাইরাসের মহামারি পরিস্থিতিতেও উদীয়মান সবল অর্থনীতির ৬৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। অর্থাৎ নবম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ এখন বাংলাদেশ।করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার মধ্যেও পাকিস্তান, ভারত, চীন এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশের চেয়ে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এদেশের অর্থনীতি।

মে : গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুর বিভাগের আটটি জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে বেশ কিছু কথা বলেছেন।তিনি বলেছেন, ‘আমরা সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতি থমকে দাঁড়িয়েছে।আমি জানি এটার প্রভাব পড়বে আগামীতেও।আন্তর্জাতিক সংস্থা এই পরিস্থিতিকে মহামারি ঘোষণা দিয়েছে।জাতি যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল পেতে শুরু করেছিল তখনই হঠাৎ করে আঘাত এসেছে।এটা শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বে যেহেতু এর প্রভাব, স্বাভাবিকভাবেই এই অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।করোনা চলা অবস্থায় দেশের অর্থনীতির চাকা যেন গতিশীল ও সুরক্ষিত থাকে মানুষকে একেবারে ঘরে বন্দি না করে সীমিত আকারে জরুরি কিছু কিছু কাজ চলানোর উদ্যোগের কথাও তিনি জানান।ক্ষুদ্র শিল্প, হাট-বাজার চালু করা হচ্ছে।ধীরে ধীরে কিছু জিনিস উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।অর্থাৎ মানুষকে সুরক্ষিত রেখে, মানুষের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিয়ে শিল্প-কারখানা পরিচালিত হতে পারে। ব্যবসার জন্য যারা ঋণ নিয়েছেন তাদের দুইমাসের সুদ স্থগিত করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী জানান, ১০ টাকায় চাল কেনার জন্য আরও ৫০ লাখ রেশন কার্ড সুবিধা দেওয়া হবে।যাদের আয়-উপার্জনের পথ নেই তারা ঈদের আগে নগদ অর্থ সহায়তা পাবে।তিনি আবারও কৃষির ওপর জোর দেন।তিনি বলেন, ‘এবার ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হবে। আশা করি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে খাবারের সমস্যা হবে না।’ কৃষির মতো তিনি পোল্ট্রি এবং দুগ্ধ শিল্প রক্ষারও পরামর্শ দিয়েছেন।

৭ মে : গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

১৪ মে : করোনাকবলিত বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারের প্রত্যেককে আড়াই হাজার করে টাকা সরাসরি নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।উপকারভোগীদের তালিকায় রয়েছেন- রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক ও হকারসহ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেওয়া লকডাউন বা শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।একইসঙ্গে অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় স্নাতক ও সম্মান পর্যায়ের ২০১৯ সালের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় প্রতি বছর প্রায় ২ কোটি ৪ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি এবং উপবৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে।এদিন প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বরগুণা, শরিয়তপুর, সুনামগঞ্জ এবং লালমনিরহাটের উপকারভোগী জনগণের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।

১৯ মে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) এর সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় সভাপতিত্ব করেন।

২০ মে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের (এনডিএমসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত।ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ছোবল দেয় বাংলাদেশে।

২৪ মে : ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা।করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ভাষণে তুলে ধরেন।তিনি বলেন, ‘ঝড়-ঝঞ্ছা-মহামারি আসবে। সেগুলো মোকাবেলা করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এবার ঈদ উদযাপনের আগেই ২০ মে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চালিয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় আম্পান।ঐক্যবদ্ধভাবে সঙ্কট মোকাবেলা করতে জনগণকে আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দেন শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা চিকিৎসা সক্ষমতা অনেকগুণ বৃদ্ধি করেছি। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাসপাতালকেও আমরা করোনাভাইরাস চিকিৎসায় সম্পৃক্ত করেছি।জরুরিভিত্তিতে ২ হাজার ডাক্তার এবং ৫ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন। হাসপাতালগুলোতে সকল ধরনের রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ এই সঙ্কটে কর্মহীন ও দরিদ্র মানুষের সহায়তায় জন্য সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন তিনি। যেমন- এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৬৭ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৯১ কোটি ৪৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ১০ কেজি টাকা দরে বিক্রির জন্য ৮০ হাজার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।কাজ হারিয়েছেন কিন্তু কোনো সহায়তা কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত নন এ ধরনের ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে মোট ১২৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য দু-দফায় ১৭ কোটিরও বেশি এবং সারা দেশের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য ১২২ কোটি ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং উৎপাদন ব্যবস্থাকে পুনরায় সচল করতে ইতোমধ্যে ১ লাখ ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।কাজ হারানো যুবক ও প্রবাসীদের সহায়তার জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনকে ৫০০ কোটি টাকা করে সর্বমোট ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পান, সেজন্য ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। চলতি মওসুমে ২২.২৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হবে, যা গত বছরের তুলনায় ২ লাখ মেট্রিক টন বেশি। ধান কাটা-মাড়াইয়ে সহায়তার জন্য কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন্ড হারভেস্টর এবং রিপার সরবরাহে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৪ শতাংশ সুদে কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া অবধি সরকারি সহায়তা কাজ অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।তিনি আরো বলেছেন-‘আপনাদের সহযোগিতা এবং সমর্থনে আমরা করোনাভাইরাস মহামারির আড়াই মাস অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে সমর্থ হয়েছি। যতদিন না এই সঙ্কট কাটবে, ততদিন আমি এবং আমার সরকার আপনাদের পাশে থাকব।’ সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের এই মহামারি সহসা দূর হবে না। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকবে না। যতদিন না কোনো প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার হচ্ছে, ততদিন করোনাভাইরাসকে সঙ্গী করেই হয়ত আমাদের বাঁচতে হবে।’ এই পরিস্থিতিতে জীবন-জীবিকার স্বার্থে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ‘বিশ্বের প্রায় সকল দেশই ইতোমধ্যে লকডাইন শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ অনির্দিষ্টকালের জন্য মানুষের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ করে রাখা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে তো নয়ই।’ তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় সচলের উপর জোর দিলেও এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার উপর জোর দেন শেখ হাসিনা।

২৫ মে : পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী ছিল। ঘরোয়া পরিবেশে ব্যক্তিগতভাবে ঈদ উদযাপিত হয়।

৩০ মে : করোনা প্রতিরোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আরও সম্পৃক্ত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। সভায় প্রধানমন্ত্রী প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করার পাশাপাশি করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মেডিক্যাল সেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন।

৩১ মে : গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০২০ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হলে পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হবে। তাঁর মতে, শিক্ষার্থীরা যাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হয় সেজন্য এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হবে না। আমরা ধাপে ধাপে এগোতে চাচ্ছি। যাতে করে এই করোনাভাইরাসে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত না হয়।কারণ এরা (শিক্ষার্থী) আমাদের ভবিষ্যত। ভবিষ্যত তো আমি ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না।সেই কারণে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উন্মুক্ত করব না।আমরা দেখি, এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারলে পর্যায়ক্রমে আমরা তখন উন্মুক্ত করব।

করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের গত দুই মাসের সুদের চাপ কমাতে ২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন, এর ফলে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া আনুমানিক ১ কোটি ৩৮ লাখ ঋণ গ্রহীতা সরাসরি উপকৃত হবেন। ইতোমধ্যে যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন, এই দুই মাস যেহেতু সব কিছু বন্ধ, কাজেই এখানে সুদ টানার প্রয়োজন হবে না।এখানে আমরা তাদের কিছু সুযোগ সুবিধা দেব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতিতে একটি বিরাট ধাক্কা এলেও তার সরকার শিক্ষা খাতে যেসব সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছিল সেগুলো বন্ধ হবে না। প্রাইমারি থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত সরকারের দেয়া বৃত্তি এবং উপবৃত্তি সুবিধা অব্যাহত থাকবে। অর্থনৈতিকভাবে আমরা যতই ক্ষতিগ্রস্ত হই না কেন আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমরা এই সহযোগিতাটা অব্যাহত রাখব। পাশাপাশি, বছরের শুরুতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ এবং নানা শিক্ষা উপকরণ বিতরণ কর্মসূচিও এ সময় অব্যাহত থাকবে।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সকলকে স্মরণ করিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলকে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং সেক্ষেত্রে সকলকে স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে। লকডাউনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সবকিছু দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু একটা দেশ এভাবে চলতে পারে না।তাই, আমি দেখতে পাচ্ছি অন্য দেশগুলোও তাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্র এবং যাতায়াতসহ নানা বিষয় অল্প অল্প করে উন্মুক্ত করছে। কাজেই আমরাও সেই পদ্ধতিতে যাচ্ছি।

সরকারের লকডাউনসহ বিভিন্ন সময়োচিত পদক্ষেপের কারণেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং এতে মৃত্যুর হার কিছুটা হলেও বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলে যদি স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চলেন তাহলে নিজেকে, পরিবারকে, পাড়া প্রতিবেশীকেও আপনারা সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। যাতে এই ভাইরাসটি আর বেশি করে সংক্রমিত হতে না পারে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসটি খালিচোখে দেখা না গেলেও এর এমন একটা শক্তি যে, সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। অর্থনীতির চাকাসহ সবকিছু স্থবির করে দিয়েছে এবং সেইরকম একটা পরিস্থিতিতে আমাদের চলতে হচ্ছে। তবে সমগ্র জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখনকার মতো সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেই আমরা যেকোন আপৎকালীন অবস্থা থেকে নিজেদের উত্তরণ ঘটাব এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেশব্যাপী বন্ধের প্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক ঋণ গ্রহীতাদের দুই মাসের সুদ মওকুফ করতে সরকারের পক্ষ থেকে ২ হাজার কোটি টাকার নতুন আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমি এ পর্যন্ত ১৮টি প্যাকেজ দিয়েছি। আর এটা নিয়ে হলো ১৯টি প্যাকেজ। যেহেতু নতুন প্যাকেজে গৃহীত ঋণের দুই মাসের সুদ স্থগিত করা হয়েছে, যে সুদের পরিমাণ ১৬ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। সেই স্থগিত সুদের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে। ফলে আনুপাতিক হারে ব্যাংক ঋণ গ্রহীতাদের আর তা পরিশোধ করতে হবে না।

ইতিপূর্বে ঘোষিত প্যাকেজসমূহে ১ লাখ কোটি টাকার ওপরে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। যেটা আমাদের জিডিপি’র ৩ দশমিক ৭ ভাগ।

শেখ হাসিনা বলেন, এই ২ হাজার কোটি টাকাসহ সরকার ঘোষিত ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজে মোট পরিমাণ দাঁড়াল ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। যা জিডিপি’র ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।

উপসংহার

উপরের বিবরণ থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সংক্রমণ ব্যাধির ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবকিছুতেই কঠোর নজরদারি বাড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন তিনি বেশি ব্যস্ত।করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বনেতাদের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উদ্বিগ্ন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত কথা বলছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সঙ্গেও।ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ ও ভিডিও কলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।অতি জরুরি মনে হলে মিটিং-কনফারেন্স করছেন গণভবনে। প্রতিদিন সকাল থেকেই দলের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দেশের সাধারণ মানুষের খোঁজ-খবর রাখছেন।

৩০ মে লকডাউন ও সাধারণ ছুটি শেষ হলেও খেটেখাওয়া মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষার জন্য সুচিন্তিত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুচ্ছে সরকার।যাতে কোনো মানুষই মৃত্যুবরণ না করে, আর যাতে মানুষ আক্রান্ত না হয়, সেই লক্ষ্য নিয়েই প্রধানমন্ত্রী সবাইকে নিয়ে কাজ করছেন।অন্যদিকে মানুষের জীবিকা রক্ষার জন্য লকডাউন শিথিল করায় অর্থনীতির চাকা আরো কিছুটা গতিশীল হয়ে উঠেছে।তবে একথা সত্য দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় প্রশংসা পাবার জন্য শেখ হাসিনা কখনো কাজ করেন না।তাঁর কাজ জনগণের স্বার্থে নিবেদিত।

 (লেখক : ড. মিল্টন বিশ্বাস,  বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, email-writermiltonbiswas@gmail.com)

https://www.banglanewslive.co.in/%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b8-%e0%a6%ae%e0%a7%8b%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a7%9f-%e0%a6%aa/?fbclid=IwAR1ESNzMd7M22hzRv6jXHmYPbu2ZmdSAVvu-sVIfgbMsvNk2pv4hP2JQyrU
আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Total Post : 31